কুষ্টিয়া প্রতিনিধি।
কুষ্টিয়ায় চলছে আমন মৌসুমের ব্যস্ততম সময়। জেলাজুড়ে এখন কৃষকদের ব্যস্ততা চূড়ায়। আমন ধানের চারা রোপণে দিনরাত পরিশ্রম করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। জেলার কুমারখালী, দৌলতপুর, খোকসা, ভেড়ামারা, মিরপুর ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মাঠজুড়ে দেখা যাচ্ছে সবুজ চারা রোপণের দৃশ্য। বর্ষার পানি জমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকেরা জমিতে নেমে পড়েছেন রোপণের কাজে। শুধুমাত্র ছেলেরাই নয়, মেয়েরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন আমনের চারা রোপণের জন্য। ভোরবেলা মোরগের ডাক শুনে ঘুম ভেঙে যায় কৃষকদের। ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকেই শুরু হয় মাঠে যাওয়ার প্রস্তুতি। নারী-পুরুষ সবাই মিলে দল বেঁধে রওনা হন মাঠের দিকে। কাঁদা-পানিতে নেমে সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণ করেন তারা। এ যেন এক মহাআয়োজনে প্রকৃতির সঙ্গে জীবনের সখ্যতা গড়ে তোলার দৃশ্য। তাই তো কবির ভাষায় বলতে হয়—”এ দেশের মাটি ও মানুষ যেন একে অপরের ছায়া, ঘামে ভিজে যায় ভূমি, আর ভূমির গন্ধে ম ম করে গায়া। “বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এখনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের চাষাবাদ চললেও, আমন ধান চাষ এ দেশের কৃষিকেন্দ্রিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শান্ত নিরব সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন গ্রামের কৃষকেরা। ঘর্মাক্ত শরীর, কর্দমাক্ত পা, আর কাঁচা ধানের চারা হাতে নিয়ে তারা প্রস্তুত করছেন জমি—আবার কেউ রোপণ করছেন ধানের চারা। এই পরিশ্রম শুধু তাদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম নয়; এটি আমাদের জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তার ভিত্তি। গ্রামের মাঠে মাঠে যে সবুজের সমারোহ, তার পেছনে লুকিয়ে আছে একজন কৃষকের নিঃস্বার্থ শ্রম, আশা আর নিরন্তর সংগ্রাম। স্থানীয় কৃষক আব্দুল মালেক জানান, “বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় এখন। আমনের ফলন ভাল হলে সারা বছরের খাদ্যচাহিদা অনেকাংশে মেটে।”তবে অনেক কৃষকই অভিযোগ করেছেন, এ বছর সারের দাম ও শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় চাষে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবুও সময়মতো রোপণ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সবাই নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কুষ্টিয়ায় আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। আশা করা হচ্ছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন ভালো হবে।