পিরোজপুর ০২ আসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা নেছারাবাদ ( স্বরুপকাঠী)। এক সময়ের বিএনপির ঘাটি হিসাবে খ্যাত এ উপজেলায় রাহুরদশা যেন বিএনপির পিছু ছাড়ছে না। এ আসনের অন্য দুটি উপজেলা ভান্ডারিয়া ও কাউখালীর ইউনিয়ন ও উপজেলা কাউন্সিল ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ভান্ডারিয়া উপজেলা কাউন্সিল নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা চলমান। কিন্তু নেছারাবাদ উপজেলার স্বরুপকাঠী পৌরসভার ০৯ টি ওয়ার্ড ব্যাতীত কোথাও কোনো কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় নি। এখানে ত্রী- বিভক্ত উপজেলা নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দলীয় চেইন অফ কমান্ড ভেংগে পড়েছে। একরকম নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে চলছে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপি। ইতিমধ্যে উপজেলা ও পৌর বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গণমাধ্যমেও ছবি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ রয়েছে আওয়ামী লীগের সাথে কারো ছবি থাকলে তাকে বিএনপির কোনো কমিটিতে স্থান না দেয়ার জন্য। এ নির্দেশনার পর উপজেলা বিএনপি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন বিএনপির যে সকল নেতার আওয়ামী লীগের সাথে ছবি রয়েছে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে শুরু করে। দলীয় প্রতিপক্ষকে কমিটি থেকে দূরে রাখার মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে এ ছবি ব্যাবহার করা হচ্ছে। দলীয় একটি সূত্র জানায় উপজেলা এবং ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনের ছবি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা পড়েছে। এছাড়াও লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিকটও চলে গেছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এসব ঘটনায় অনেক নেতার কপাল পুড়বে বলে একাধিক বিএনপি সূত্র জানায়।
সম্প্রতি স্বরুপকাঠী পৌর বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য স্বরুপকাঠী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম ফরিদ এবং সদস্য সচিব কাজী কামাল হোসেন সভাপতি পদপ্রার্থী হয়েছেন। কাউন্সিল সফল করার জন্য গত ০৯ জুলাই আয়োজিত প্রস্তুতি সভাকে কেন্দ্র করে কাজী কামাল ও ফরিদ পন্থী কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, হামলা পাল্টা হামলার মত ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কয়েকজন আহতও হয়েছেন। এ বিষয়ে কাজী কামাল হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, শফিকুল ইসলাম ফরিদ ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হউক এটা চাচ্ছেন না। তিনি সিলেকশনে সভাপতি হতে চাচ্ছেন। তাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাছির তালুকদারের সাথে আতাত করে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিএনপি নামধারী একদল উশৃংখল লোক নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ইতিমধ্যে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এবং সভাপতি পদপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম ফরিদ ও পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান মানিক এর আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। শফিকুল ইসলাম ফরিদ এর পক্ষ থেকেও সংবাদ সন্মেলন করে হামলা ও আওয়ামী লীগের সাথে ছবির বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়।
গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলার সবগুলি ইউনিয়ন থেকে বিএনপির পূরণকৃত সদস্য ফরম যাছাই বাছাই শুরু হলেও তা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। ফরম পূরণে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অভিযোগও উঠেছে। প্রকৃত বিএনপি নেতাকর্মীদের অবহেলা করে তাদেরকে সদস্য ফরম পূরণ না করানোরও অভিযোগ রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রীদের সাথে যাদের ছবি রয়েছে তারা ফরম পূরণ করায় বিতর্ক শুরু হয়। আপাতত সকল ইউনিয়নের কাউন্সিল স্থগিত রয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছে বিভক্তি। এখানকার বিএনপি তিনটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নেসারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোঃ ফখরুল আলম। অন্য একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ এবং আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল্ বেরুনী সৈকত। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের আচরণ এখন বেপরোয়া ও নিয়ন্ত্রণহীন। কেউ কোনো অপরাধ করলে অমুক পন্থী তমুক পন্থী বলে পার পেয়ে যায়। চেইন অফ কমান্ড ভেংগে পড়ার ফলে কেউ কাউকে মানছে না। আন্ত কলহে প্রতিপক্ষের উপর হামলা মামলার ঘটনাও ঘটেছে। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের অফিসও ভাংচুর করেছে । অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ সুযোগটি ব্যাবহার করছে। উপজেলার একজন শীর্ষ নেতার সমর্থক নেতা কর্মীরাই সকল প্রকার অপকর্মের শীর্ষে রয়েছে। গত বছরের ০৫ আগস্টের পরবর্তীতে নেছারাবাদ ( স্বরুপকাঠী) উপজেলায় যতগুলি অঘটন ঘটেছে তার সবগুলোর সাথেই ঐ বিতর্কিত নেতার অনুসারীরা জড়িত। এখনই নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বের বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ না হলে এবং বেপরোয়া কর্মী সমর্থকদের লাগাম টানতে না পারলে উপজেলা বিএনপির রাজনৈতিক অংগনে কঠিন খেসারত দিতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।