শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র হোক কিংবা জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন, সব যেনো অগ্রাহ্য করে ইচ্ছে হলেই পাল্টিয়ে ফেলা যায় ব্যক্তি স্বার্থে। যার প্রমান মেলে ঠাকুরগাঁওয়ের আবুল হোসেন সরকার ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানে কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি ও সদর ইউএনও’র কার্যক্রমের দিকে তাকালেই।
কোন ধরনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই আবুল হোসেন সরকার ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁও সদর ইউএনও ও কলেজের গভর্ণিং বডির বিরুদ্ধে।
২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আবুল হোসেন সরকার ডিগ্রি কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, অত্র প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মেয়াদ ১ বছর পূর্তি হওয়ায় নতুন করে বিধি মোতাবেক দায়িত্ব গ্রহণ করা আবশ্যক। সে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের সভাপতির নির্দেশক্রমে ২৪ জানুয়ারী শুক্রবার সকাল ১০টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের জন্য উপস্থিত হতে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের ৮ জন শিক্ষক উপস্থিত হয়ে সাক্ষাৎকার দেন।
প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপত্রে উল্লেখিত দিক নির্দেশনা অনুসরন করেছেন বললেও আদতে তার কোন প্রমান মেলেনি। প্রকৃতপক্ষে অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণে সিনিওরিটি বা জ্যেষ্ঠতার মাপকাঠি হবে, প্রথমে এমপিও ভুক্তির তারিখ, তারপর যোগদানের তারিখ এবং বয়সের ভিত্তিতে সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে। যার কোনোটিই দেলোয়ার হোসেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি। এছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন এমপিও ভুক্ত হয়েছেন দ্বিতীয়বারে। একদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপত্র এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় ( মাউশি)’র প্রজ্ঞাপন অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বভার প্রদানে ইউএনও’র কার্যক্রম এ দুটোই সাংঘর্ষিক। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বভার প্রদানে ইউএনও’র ভ’মিকাই বলে দেয় তিনি নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।
আবুল হোসেন সরকার ডিগ্রি কলেজের ক্রমানুসারে জ্যৈষ্ঠতম ৫ জন শিক্ষক হলেন- সহকারী অধ্যাপক আয়শা পারভীন বানু, মো ঃ খোদা বকশ, সৈয়দ খালিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সুভাস চন্দ্র রায় এবং জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বিউটি রাণী বিশ^াস । কিন্তু ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ না করে ৬ষ্ঠতম প্রভাষক মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৯ জুন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ আছে অধ্যক্ষের অবর্তমানে অধ্যক্ষ নিয়োগের শর্তে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে উপাধ্যক্ষ/জ্যৈষ্ঠতম ৫জন শিক্ষকের মধ্য থেকে যে কোন একজনকে সর্বোচ্চ ১ বছরের জন্য দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। অপরদিকে ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা আছে অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।
আবুল হেসেন সরকার ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, সভাপতির নির্দেশে সব কিছু করা হয়েছে। তবে পরিপত্র ও প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে আবুল হোসেন সরকার ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খোদা বক্শ বলেন, বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আমরা চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ২৪ তারিখ শুক্রবার সকাল ১০ টায় গভর্ণিং বর্ডির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত হই। সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর সাক্ষাৎকার শুরু করেন এবং কে কোন দলের অনুসারী তা জানতে চান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। আমরা সেখানে ৮ জন উপস্থিত ছিলাম। নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দায়িত্ব প্রদান করার কথা থাকলেও তার সাক্ষাৎকারের বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আবুল হোসেন সরকার ডিগ্রি কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি খাইরুল ইসলাম জানান, আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপত্রে উল্লেখিত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দেলোয়ার হোসেনকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেছি। তবে ৮ শিক্ষককে নিজ অফিসকক্ষে ডেকে সাক্ষাৎকার ও কে কোন দলের অনুসারী জানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুধু তাদের অভিযোগ বা পরামর্শ শোনার জন্যই ডেকেছিলাম।
ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা অফিসার শাহীন আকতার বলেন, কলেজের ক্ষেত্রে কি আছে এই মহুর্তে জানা নেই। তবে পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপন মানা না হলে, সেটা অনিয়ম।
সম্পাদকঃ এস এম এইচ ইমরান, প্রকাশকঃ আমেনা খাতুন ইভা
All rights reserved ©2017dailyaparadhchakra.com