।কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি
কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে শুরু হলেও চরম বিশৃঙ্খলা ও নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শেষ হলো কুষ্টিয়া জেলা ট্রাক-ট্রাক্টর কাভার্ড ভ্যান ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি: নং-১১১৮) ত্রি-বার্ষিক সাধারণ সভা। সভার প্রথম অধিবেশন শেষ হলেও, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বের আগেই ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘পলায়ন’ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ শ্রমিকরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সভাস্থল মুহূর্তেই উত্তাল হয়ে ওঠে এবং বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শত শত শ্রমিক।
আজ (২৬/০৭/২০২৫ রোজ-শুক্রবার) সকালে কুষ্টিয়ার পৌর টাউন হলে এই ত্রি-বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা উপলক্ষে শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট সামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু এবং প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির খান।
এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি রবিউল হোসেন (রবি), কুষ্টিয়া জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি হাজী আব্দুর রশিদ এবং খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির কার্যকারী সভাপতি মিজানুর রহমান (মিজান)।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়নের সভাপতি জনাব আলী আকবর এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক জনাব ওমর ফারুক।
প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকদের ভাষ্যমতে, সভার প্রথম অধিবেশনে কেন্দ্রীয় ও আমন্ত্রিত অতিথিরা বক্তব্য রাখেন। নেতারা শ্রমিকদের ঐক্য ও অধিকার নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিলেও বিপত্তি বাধে দ্বিতীয় অধিবেশনের ঠিক আগে। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর সভার দ্বিতীয় অধিবেশনে ইউনিয়নের গত তিন বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব পেশ এবং সাধারণ শ্রমিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শ্রমিকরা সভাস্থলে ফিরে এসে দেখেন, মঞ্চ ফাঁকা। ইউনিয়নের সভাপতি আলী আকবর ও সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ কমিটির দায়িত্বশীল কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এই ঘটনায় সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের তহবিলের কোটি কোটি টাকার হিসাব না দেওয়ার জন্যই নেতারা পরিকল্পিতভাবে পালিয়েছেন।
সভাস্থলে উপস্থিত প্রবীণ ট্রাকচালক জামাল উদ্দিন ক্ষোভের সাথে বলেন, “এটা আমাদের সাথে নির্লজ্জ প্রতারণা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে বড় বড় কথা বললেন, আর যখন আমাদের ঘাম ঝরানো টাকার হিসাব দেওয়ার সময় এলো, তখন চোরের মতো পালিয়ে গেলেন। আমরা আমাদের টাকার হিসাব চাই, এই পলাতক কমিটির বিচার চাই।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা স্লোগান দিতে থাকেন, “পলাতক কমিটি মানি না, মানবো না”, “শ্রমিকের টাকা ফেরত চাই, দিতে হবে”। এক পর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা মঞ্চে উঠে পড়েন এবং সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কেন্দ্রীয় নেতারা এমন নজিরবিহীন ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সভাপতি আলী আকবর ও সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে একটি ইউনিয়নের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন আকস্মিক ‘উধাও’ হয়ে যাওয়ার ঘটনা কুষ্টিয়ার শ্রমিক রাজনীতিতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সভাস্থলেই অবস্থান করে পরবর্তী করণীয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ এখন এক গভীর অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।