মোস্তাক চৌধুরীঃ
হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাতের পাশাপাশি তারই ঘনিষ্ট সহচর বিদ্যালয়ের ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক মাওলানা মকবুল হোসাইনের দুর্নীতির লোমহর্ষক আত্মকাহিনী বেরিয়ে এসেছে মনুকূলের কাগজের তথ্য অনুসন্ধানে।
মৌলভীবাজার জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্টনের নাম হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকার একের পর এক এহেন দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগমের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, যা প্রশাসনিক ও সামাজিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্রীদের মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী, অভিভাবকদের সভা সমাবেশ,লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ কোন কিছুতেই টনক নড়েনি তার।
এদিক প্রধান শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ সহকারী হিসেবে পরিচিত ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক মাওলানা মকবুল হোসাইনের বিরোদ্ধেও নানা দুর্নীতির কাহিনী চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে তার বিরুদ্বে তদন্ত করতে গিয়ে। একজন ধর্মীয় শিক্ষক হবার পর ও তার দুর্নীতির কর্মকান্ড নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে, একজন ধর্মীয় শিক্ষক হয়েও তিনি প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সমর্থন দিয়ে চলেছেন নিয়মিত।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগম জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), তদন্ত কমিটিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন প্রদান শিক্ষিকা। এ মামলা দায়েরে প্রধান শিক্ষিকার দুর্নীতি টাকা আত্নসাৎসহ সকল অনিয়মের ছায়া সঙ্গি হয়ে সব সময় লেগে আছেন ধর্মীয় শিক্ষক মাওঃ মকবুল।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানায় মাওলানা মকবুল বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। সাধারণত তিনি সকাল ১১টার পর আসেন এবং টিফিনের পর আর তাকে দেখা যায় না। সহকারী প্রধান শিক্ষক তাকে নিয়মিত ক্লাসে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও সফল হননি বলে জানান বিদ্যালয়ের এসিস্টেন্ড হেড মাষ্টার। তিনি আরও বলেন এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বললে তাঁকে কয়েকবার হুমকি-ধমকিও দিয়েছেন বলে জানান। এছাড়া অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ডিউটি দিলেও মাওলানা সাহেবকে কখনো ডিউটিতে পাঠাতে পারেননি ।কর্মক্ষেত্রে এরুপ আচরণ শৃঙ্খলা ভঙের সামিল হলেও,প্রধান শিক্ষকের আনুকুল্যে তিনি এসব প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছেন সকলকে বিদ্ধাঙুলী দেখিয়ে।
খবর নিয়ে জানা গেছে ২০১৮ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, মাওলানা মকবুলের নিয়োগে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার সনদপত্র ছিল না। তার খবর নিতে গিয়ে জানা যায় বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে তার নামে একাধিকবার চেক ইস্যু করা হয়েছে, যার প্রমান আমাদের কাছে রয়েছে। এসব কি করে সম্ভব। এহেন কর্ম প্রধান শিক্ষক কর্তৃক আর্থিক সুবিধা দেয়ার প্রমাণ বলে অনেকে মনে করেন। শুধু তাই নয়, নামাজের কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত একটি রুম স্কুলে রয়েছে এ রুম তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, “এই রুমটা আগে আমরা নামাজের জন্য ব্যবহার করতাম, এখন এটা বন্ধ থাকে। মাঝে মাঝে মকবুল স্যার এখানে বাইরের লোকজন নিয়ে বসেন।
শিক্ষকরা বলেন বিদ্যালয়ের বার্ষিক মিলাদ অনুষ্ঠান নিয়েও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা জানান, মিলাদের নামে অন্যান্য স্কুলের সমান হারে চাঁদা নিয়ে জমজমাট অনুষ্টান হয়ে থাকে অথচ এ বিদ্যালয়ে সমান টাকা তোলে ধর্মীয় শিক্ষক মিলাদ করেন দায়সারা ভাবে। অনুষ্টান করেন একেবারে নিম্নমানের । এ নিয়ে বিগত কয়েকবছর ধরে অভিভাবকরা অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের ধারণা, প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগমের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই মাওলানা মকবুল এত অনিয়ম ও সুবিধাভোগে সক্ষম হয়েছেন।
রাশেদা বেগমের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা থেকে তাকে রক্ষা করতে মাওলানা মকবুল বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের পেছনে নিয়মিত ধরনা দিচ্ছে। স্কুলের কার্যক্রম ছেড়ে প্রধান শিক্ষিকার পিএস হিসাবে তিনি কাজ করছেন নিয়মিত। একজন ধর্মীয় শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। অথচ মাওলানা মকবুলের পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ তার নৈতিকতা ও পেশাগত সততার প্রশ্নবিদ্ধ। বিদ্যালয়ের শিক্ষক,অভিভাবক ও স্থানীয় নাগরিক সমাজ বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
এ নিয়ে বিদ্যাপীঠের ধর্মীয় শিক্ষক মকবুল হোসাইন এর সাথে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারা যায়নি। হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ও ধর্মীয় শিক্ষকের দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎতের বিরুদ্বে ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যালয়কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্বার করা আদৌ সম্ভব নয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিমত।