
ঢাকা বরিশাল যোগাযোগ ব্যবস্থায় সময়ের প্রচুর অনিয়মিতর কারনেই কয়লা চালিত স্টীমারের উপর এক সময় যাত্রী সাধারণরা আস্তা হারিয়ে ফেলছিলো। দোতলা কাঠ বডি লঞ্চের আবির্ভাব ঘটতে থাকে পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝি থেকে ষাটের দশকে। লঞ্চ গুলো ঢাকার উদ্দেশ্যে বিকেল পাচটায় বরিশাল পদ্মাবতী ঘাট থেকে রওয়ানা হতো। কিছু লঞ্চ চাঁদপুর,পট্টি, মুন্সিগঞ্জ, ঘাট দিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যবসায়িদের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে শুরু করেছিলো। ডাব, পান, মাছ, তরকারির চকবাজারের তৈজসপত্র, কাপড়, চুড়ি-ফিতা, আলতা, ইত্যাদির পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় বেশ ভালোই লাভবান হতে ছিলো বরিশালের ব্যবসায়ীগণ।সেই সুবাদে বেশ কিছুঢাকা,মুনশিগঞ্জ,বিক্রমপুর,শরীয়তপুর নারায়নগঞ্জের ইত্যাদি আঞ্চলের মানুষ বরিশাল ও ঝালকাঠিতে স্থানীয় হতে শুরু করেছিলো।
এক কথায় বলা যায়, বরিশাল চকবাজার আর ঢাকা চকবাজারের সেতু বন্ধনই ছিলো দোতলা কাঠবডি লঞ্চ।
বিউটি অব বিক্রমপুর, ইলিয়টগঞ্জ, মারী, বসুন্ধরা, সৈয়দ, সাহারুন্নেছা, মেহেরুন্নেছা,পিন্টু, ইত্যাদি ছিলো উল্লেখযোগ্য। ষাটের দশকে দুআনার গরুর গোস আর দুআনার ভাত, ডাল ফ্রী। ভাড়া আটআনা বারো আনা। প্রথম শ্রেণির কেবিনে নারকেলের সোবলার গদি আর শক্ত একটা বালিস কোনরকম একজন শোয়া যেত। দোতলার পিছনে ২য় শ্রেণি, ঐ একই কায়দার। ভাড়া প্রথম শ্রেণি কেবিন ১০০ টাকা। ২য় শ্রেণি ১০০ প্রতি টি সিট। পাতার হাটের গান্ধী বাবুর বিউটি অব পাতারহাট নামে একটি কাঠবডি দোতলা লঞ্চ চলতো। বিউটি সিনেমা হলের মালিক কামাল চৌধুরী, বরিশাল চকবাজারের মোহন মিয়াদের “সাকু” ভোলার আলতাফ মিয়াদের সঞ্চিতা, পল্টনের মেট্রোপলিটান হোটেল মালিকদের ” রাজহাংস” কালাম চেয়ারম্যান, এরা বরিশালের বাসিন্দা না হলেও কাঠবডি লঞ্চ দিয়ে এরা বরিশালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বরিশালের পৌর চেয়ারম্যান ও ঠিকাদার গোলাম মাওলা বরগুনা পাথরঘাঠা বাগেরহাট ইত্যাদি প্রত্যন্ত অঞ্চল কে একতলা লঞ্চ দিয়ে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত যোগাযোগের মধ্যে রেখেছিলেন। তার একটা ডে সার্ভিস ছিলো সুরভী, রেজভি। সেই এম এল সুরভী বরিশাল থেকে ১২ টায় ছেড়ে হিজলা, মুলাদি সহ বহু লোকাল ঘাট ধরে সদরঘাটে পৌছতো পরের দিন প্রত্যুষে। চা,চিড়া নারকেল ছিল তখনকার কাঠবডি লঞ্চের অন্যতম খাবার।