হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার চানপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে জিয়াউল হক স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের বলি হিসাবে স্ত্রীর প্ররোচনায় শশুরবাড়ির লোকজন দুদের সাথে বিষ মিশিয়ে অচেতন করে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবারের লোকজন।
খবর নিয়ে জানা গেছে জেলার বানিয়াচং উপজেলার চানপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ৪র্থ ছেলে জিয়াউল হক লেখাপড়া করার সুবাদে ছোটকাল থেকেই একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী গ্রাম হলদাপুর গ্রামে তার বৃটেন প্রবাসী আপন খালার বাড়িতে থাকতেন। সেখানে থেকে সে লেখাপড়া করেছে। একই এলাকার একই বাড়িতে তার মামার বাড়িও রয়েছে। তার খালা আজিজুন নেছা তখন দেশের বাড়িতেই থাকতেন। জিয়াউল হককে নিজের সন্তানের মতো লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলেছিলেন। পরবর্তীতে তার খালা—খালু ছেলে মেয়ের সাথে বৃটেন চলে গেলে তার বিশাল প্রপাটিসহ দোকানপাট জমিজমা দেখভাল করার সমুহ দায়িত্ব তাকে দিয়ে যান।
তার লেখাপড়ার শেষ পর্যায়ে তখন তার খালা তাকে চাকরী বাকরী না করিয়ে তার নিজের ব্যবসা বানিজ্য জাগাজমি দোকানপাট ভিটা বাড়ি জিয়াউল হককে সমজাইয়া খালাখালু দুজনই বৃটেনে চলে যান স্থায়ীভাবে। জিয়াউল হক তাঁর খালার বাড়ি থাকার সুবাদে খালার বিশাল প্রপার্টি জাগাজমি দোকানকোটা সবকিছুর উপর নজর পড়ে তার মেঝ মামার। এগুলো তারা আত্মসাৎ করতে তার মেঝমামা আব্দুর রুপয়ের বড় মেয়ে তামান্না আক্তার (২৭)কে পারিবারিক ভাবে বিয়ে দেয় ভাগিনার কাছে।
তাদের ধারনা ছিল ভাগিনার কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়ে ভাগিনাকে হাত করে বৃটেন প্রবাসী বোনের বিশাল প্রপাটি হাতিয়ে নিতে পারবে এ ধারণাকে মনে পোষণ করে মেয়ের অমতে মেয়েকে ভাগিনার কাছে বিয়ে দেয়। কিন্তুু বিয়ের পরে অনেক ছল—চাতুরী করেও ভাগিনা নামক জামাইকে হাত করতে ব্যর্থ হয়। জিয়াউল হক একজন সৎ সাহসী কর্তব্যপরায়ন লোক। বোনের জমিজমা দখল দোকানকোটা সবকিছু নিজের করতলে নিতে চেষ্টা করলে বাধ সাধে জামাই। সে জানায় আমার খালা আমার মা বাবাতুল্য। আমার খালাকে না বলে এ সম্পদের ধারে কাছে আমার মামা নয় আমার নিজ বাপ মাকেও ঘেষতে দেবো না। শশুড়ের সকল আশায় জল ঢেলে দিল ভাগিনা জামাতা তাই তারা তার উপর রেগে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে বোনের সম্পদ দখল করতে হলে জামাই নামক এ পাহারাদারকে মেরে ফেলতে হবে।
অন্যদিকে তামান্না এ বিয়েতে রাজি ছিল না তার এলাকায় অন্য এক ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিল। বিয়ের পুর্বেই তামান্না তার প্রেমিকের সাথে দেহ ঘটিত সম্পর্ক ছিল। তাই সে এ বিয়ে মেনে নিতে রাজি হয়নি। তামান্নার বাবা আব্দুর রুপ জোর করে তামান্নাকে বিয়ে দেয় ভাগিনা জিয়াউল হকের কাছে বোনের সম্পদ লুটেপুটে খাবে বলে। মামাতো বোন তামান্নার সাথে জিয়াউল হকের বিয়ে হয় ২০২২ সালে ২ অক্টোবর। জিয়াউর হক বিয়ের পরে বউকে নিয়ে খালার বাড়িতে বসবাস শুরু করে।
এ সুবাদে তামান্না আক্তার তার প্রেমিকার সাথে দৈনিক সম্পর্ক রীতিমতো চালিয়ে যায়। জিয়াউল তামান্নার পারিবারিক সংসার ভাল ছিল না। সর্বক্ষণ ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তামান্না বিবাদে জড়িয়ে পড়তো। তামান্নার তার স্বামীকে সহ্যই হতো না।
সংসারে তার একদম মন ছিল না। সব সময় নিজের সংসার ছেড়ে বাপের ভিটেতে পড়ে থাকতো তার প্রেমিকার সাথে শারীরিক মানসিক সম্পর্ক বজায় রাখবে বলে। এক পর্যায় তামান্নার প্রেমিকার সাথে দৈহিক সম্পর্ক ধরে পেলে জিয়াউল। তাতে জিয়াউল তামান্নাকে এ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে বলে। তামান্না সাফ সাফ জানিয়ে দেয় এটা সম্ভব নয়। বরং জিয়াউল হক তাকে ছেড়ে দিতে বলে। তামান্না তার প্রেমিকার সাথে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক চালিয়ে যায় বাবার ভিটেতে থেকে। তাদের দুজনের সম্পর্কে ছেদ ধরে। কিন্তুু হার মানেনি তামান্না।
গেল বছর ২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ সকাল অনুমানিক ১২টার দিকে তার প্রতারক লোভি শশুর শ্বাশুড়ী তার স্ত্রী তামান্না আক্তার ও তামান্নার বোন লাকি আক্তার এবং খোদেজা আক্তার তাকে চা পানের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়া ডাইনিং রুমে বসিয়ে তৈয়বুর রহমান তুহিনের পুর্বে পরিকল্পনা মতে বিষ মিশিয়ে চা এনে দেয়। শশুড়ালয়ে চা খেয়েই জিয়াউল অচেতন হয়ে পড়ে তারপর তাকে ভেতর নিয়ে গিয়ে শশুর আব্দুর রুপ স্ত্রী তামান্না স্ত্রীর বোন লাকি খোদেজা ফরহাদ, সাইফুল ওরপে রাজন আজিজুর তামিমসহ শশুরালয়ের সবাই মিলে পুর্ব পরিকল্পনা মতো গলাতে গামছা পেঁছিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে বলে অভিযোগ করেছে মামলার বাদী জিয়াউলের ছোট ভাই ফয়জুল ইসলাম শিক্ষক।
খবর নিয়ে জানা গেছে জিয়াউল হকের মৃত্যুরে পর তার চতুর শশুর এ হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে গাড়ি এনে প্রানহীন শরীরকে হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতাল নিয়ে যায় নাটকীয়ভাবে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক জিয়াউল হককে মৃত ঘোষণা করেন। তারপর মৃত জিয়াউল হককে আবার তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ফোন করে জিয়াউল হকের পরিবারকে জানায় যে জিয়াউল হককে বুকের ব্যথায় হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে পথিমধ্যে হার্ট—এট্যাকে মারা গেছে।
এ খবর শুনে তার পরিবার হতভম্ব হয়ে পড়ে। দ্রুত ছেলেকে দেখতে তার শশুরবাড়ি যায়। সেখানে গিয়ে দেখে মৃত জিয়াউল হককে গোসল করিয়ে কাঁপন পরিয়ে তাড়াতাড়ি কবরস্ত করার সমুহ কাজ সম্পন্ন করেন। তার পরিবারের লোকজন যাবার পর হট্টগুল শুরু হয়ে যায়। লাশ দেখে লাশের গলায় ফাঁস লাগিয়ে মারার চিহ্ন দেখতে পায় যা সুরমা দিয়ে ঢাকা হয়েছে। এ নিয়ে হাল্লাচিৎকার শুরু হলে আশপাশের লোকজন জিয়াউল ও তার বাবার শশুর বাড়ির লোকজন আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে তার শশুর হত্যাকান্ডটি হার্ড এট্যাকে রুপ দিয়ে বিষয়টি বিভিন্ন ভাবে ধামাচাপা দিয়ে জিয়াউল হক এর পারিবারিক কবরস্থানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
কিছু দিন পরে জিয়াউল হক এর পরিবার তাদের মামারবাড়ির লোকজন মারফতে জানতে পারে যে জিয়াউল হক হার্ট এট্যাকে মারা যায়নি তাকে চায়ের সাথে বিষ মিশিয়ে অচেতন করে তারপর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের রহস্য বেরিয়ে আসলে জিয়াউল হক এর ছোট ভাই ফয়জুল ইসলাম বাদী হয়ে ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমল আদালত ৪ মামলা দায়ের করেন যার নাম্বার ঈজ ৫৮২/২৪ মামলার ধারা ১২০(খ) ৩০২/৩৪ কোর্ট মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই হবিগঞ্জকে তদন্তের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তকারী কর্মকর্তা কাছে।
জিয়াউল হকের পরিবার তার ছেলের লাশ কবর থেকে তোলে লাশের ময়নাতদন্তের করে তাদের ছেলের প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার দাবী করছে। তারা আইনের উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে তাদের ছেলের হত্যাকান্ডের বিচার দাবী করছে।